মুজিববর্ষে সরকারের উপহার : আরও ৫৩ হাজার পরিবার পাচ্ছে ঘর
মুজিববর্ষে সরকারের উপহার হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৫৩ হাজারেরও বেশি ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবার ঘর ও জমি পাচ্ছে। আগামী রবিবার (২০ জুন) এসব পরিবারপ্রতি বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকাঘর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে করবী হলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এর আগে প্রথম দফায় ১ম পর্যায়ে গত ২৩ জানুয়ারি দুই-কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকাঘর ও ব্যারাকে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর উপহার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর সর্বপ্রথম জাতির পিতাই দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল অসহায় পরিবার পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব উদ্যোগে ১৯৯৭ সনে শুরু হওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম চলছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত সময়ে মোট ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে (ব্যারাক, বিশেষ ডিজাইনের ঘর, নিজ জমিতে ঘর, দুই শতক জমিসহ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা একক গৃহ ইত্যাদি) বলে জানান তিনি।
দেশে ‘ক’ শ্রেণীতে গৃহহীণ ও ভূমিহীনের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১ এবং ‘খ’ শ্রেণিতে ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১ জন জানিয়ে মুখ্যসচিব বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই আরও ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভূমিহীনদের ডেকে এনে তাকে জমির মালিক এবং জমি দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের এই নজিরবিহীন প্রকল্পটি একটি মডেল। এ প্রকল্প আমাদের জন্য গর্ব করার বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংকটের মধ্যেও ঘোষণা দিয়েছিলেন একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সেই প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
বিনামূল্যে জমি ও গৃহ প্রদানের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম ও সর্ব বৃহৎ উল্লেখ করে ড. কায়কাউস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বিশাল এবং মানবিক এ উদ্যোগ সারা বিশ্বের কাছে দারিদ্র বিমোচনে সক্ষমতা প্রমাণের একটি নজির বিহীন ঘটনা।
‘এ সকল ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল অসহায় আশ্রয়হীন মানুষকে শুধু সেমি পাকা বাড়িই দেয়া হচ্ছে না, সঙ্গে সঙ্গে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের যৌথ নামে জমির মালিকানাসহ সারা জীবনের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হচ্ছে। জমির মালিকানা প্রদানের মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবন যাত্রায় মানের পরিবর্তন এসেছে। নারীর ক্ষমতায়নও হচ্ছে।’
এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু বাসস্থানই নয় পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তা, খেলার মাঠ, গাছপালাসহ সকল কিছুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব।
তিনি বলেন, ঘর ও জমি দেয়ার পাশাপাশি উপকারভোগীদের কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে মানবিক দিক বিবেচনায় ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল অসহায় মানুষজনকে সকল কিছুর ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতা এবং মহানুভবতার জন্যই সম্ভব হয়েছে।
মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে আহমেদ কায়কাউস বলেন, প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ১৯টি বহুতল ভবনে ৬০০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদান করা হয়েছে। পৃথক ডিপিপি প্রণয়নের মাধ্যমে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২য় পর্যায়ে ১১৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে ৩৮০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফ্ল্যাট পাওয়া ৬০০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, অনেক সরকারি জমি অবৈধ দখলে ছিলো। সেখান থেকে জমি এনে পুনর্বাসন করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে প্রায় ৩৩ একর জমি অবৈধ দখলে ছিলো। সেটি এখন নান্দনিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এটি একটি সামাজিক আন্দোলন।
গৃহহীনের নামের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ড. কায়কাউস বলেন, ‘আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এর মাধ্যমে ৯৯ শতাংশই সঠিক ছিলো না। যার স্বার্থহানি হয়েছে তিনি এমন অভিযোগ করেছেন। তবে বিভিন্নভাবে বা গণমাধ্যমে অভিযোগ এলে আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করি। কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
উপকারভোগী অনেকে টাকার জন্য ঘর-জমি বিক্রি করে দিতে পারে-এক্ষেত্রে কিছু ভাবছেন কি না-অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাইলেই বিক্রি বা হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আশ্রয়ন-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি।